স্বামীদের একটি বিষয় ভালোভাবে মাথায় রাখা দরকার যে, দুনিয়ার প্রত্যেক নারীর তার দাম্পত্য জীবনে তিনটি মৌলিক জিনিসের প্রয়োজন পড়ে। একটিকে অন্যভাবে বলা যায়, তারা তিনটি জিনিসের প্রত্যাশী হয়ে থাকে-
০১। নিরাপত্তা (Protection): নারীদের প্রথম চাহিদা হলো নিরাপত্তা (Protection)। একজন নারী তার স্বামীর জন্য নিজের পিতা মাতা ছেড়ে স্বামীর ঘরে আসে। এখন সে যেখানে এসেছে সেখানে তার নিরাপত্তা দরকার। নিজের প্রানের নিরাপত্তা, ইজ্জত ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিজের ইমানের নিরাপত্তা। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রথম বিষয় হলো একজন নারীর জন্য মাথা খোজার মতো একটু জায়গার ব্যবস্থা যেখানে সে তার সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারে অর্থাৎ সেখানে জীবনের নিরাপত্তা থাকবে। তার স্বামী তাকে ও তার সন্তানদের রক্ষা করতে পারবে। এটা একজন নারীর স্বাভাবগত চাহিদা বটে। স্বামী যদি তাকে এমন জায়গায় রাখেন যেখানে সে অনিরাপত্তায় ভোগে তাহলে ঐ সংসার কখোনই সুখ-আন্দন বিরাজ করে না। আর দি¦তীয় বিষয় হলো স্বামীর উচিত তার স্ত্রীকে ভালো-মন্দ উভয় সময়ে তাকে গ্রহন করে নেয়া। কারন একজন নারীও তো মানুষ, তার মধ্যে ভালোগুন যেমন থাকতে পারে, তেমনি থাকতে পারে মন্দগুনও। এসব জেনেই একজন স্বামীকে তার স্ত্রীকে বরন করে নিতে হবে। স্বামীর তার স্ত্রীর ভালোব যেমন দায়িত্বশীল হবে তেমনি মন্দেরও। একজন স্বামীকে তার স্ত্রীকে আস্বস্ত করতে হবে যে, তুমি আমার সংসারে এসেছো এখন থেকে তোমার নিরাপত্তা দেওয়া দায়িত্ব আমার। এমন যেন না হয়, স্ত্রী ভাল করলে তার পাশে আছি আর মন্দ করলে তার পাশে আমি নাই। স্ত্রীর মধ্যেও এই আতœবিশ্বাস সৃষ্টি হতে হবে যে, আমি ভাল করলে আমার স্বামী যেমন পাশে থাকবে ঠিক তেমনি আমার কোন ভুল হলে উদারতা ও ধৈর্যের সঙ্গে মেনে নেবে। কেউ কাউকে ছুড়ে ফেলবে না। কোন স্ত্রী যখন তার স্বামীর ব্যাপারে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, তিনি আমার ভরসা ও ছায়া। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এক অশেষে নেয়ামত দান করেছেন। আমি একটি নিরাপদ স্থানে আছি আমার আর কিসের ভাবনা। নারীর ভেতর থেকে দূর হয়ে যাবে অজানা শঙ্কা অর্থাৎ কাল আমার কি হবে, আমার ভবিষ্যৎ কি হবে এই সকল চিন্তা থাকবে না। এতে একজন নারী স্বস্থির হয়ে স্বামীর ঘরে থাকতে পারবে। এজন্য দাম্পত্যজীবনের প্রথম বিষয় হলো- স্ত্রীর নিরাপত্তার। একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর এই নিরাপত্তা সু-নিশ্চিত করা।
০২। মনোযোগ (Attention): দাম্পত্যজীবনে একজন স্ত্রীর দ্বিতীয় যে বিষয়টি প্রত্যাশা তা হলো স্বামীর মনোযোগ (Attention)। অর্থাৎ স্বামী তার স্ত্রীকে সময় দেওয়া। তার সঙ্গে সুন্দর ও আনোন্দ পূর্ন সময় কাটানো। তার প্রয়োজন অনুভব করা। তার খোজ-খবর রাখা। এমন নয় যে, স্বামী সারাক্ষন অফিসের কাজে লিপ্ত থাকে। স্ত্রী ঘরে অসুস্থ অথচ তার খোজ খবর নেয়া না তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে য্ওায়ার সময় হয় না। যখন স্ত্রী মনে করে আমার স্বামী আমার দিকে কোন মনোযোগই দিচ্ছে না, আমার কোন প্রয়োজনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না তখন তার পক্ষে প্রশান্তি ও সুখময় জীবন কাটানো সম্ভব হবে না। সুতরাং একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো তার স্ত্রীর প্রতি মনোযোগ দেয়া। মনোযোগ দেয়ার অর্থ এই নয় যে, ঘরে এসে তাকে বিরক্ত করা তার সাথে ঝগড়া বিবাদ করে সময় কাটানো। বরং মনোযোগ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তার স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া, তার Attention বা সন্তুষ্টি অর্জিত করা অর্থাৎ সব ধরনের সন্তুষ্টি বা মানসিক বা জৈবিক হতে পারে। এসব কিছু অর্জিত হবে একজন স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর Attention বা মনোযোগ। আর এর ফলে একজন স্ত্রী তার স্বামীর সংসারে প্রশান্তি বোধ করবে। এজন্য স্ত্রীর মানসিক স্বস্তির ব্যবস্থা করা স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব। এবং তার স্ত্রীকে সকল বিষয় স্বামীর সাথে বিনিময় করার সুযোগ দিতে হবে। যাতে স্ত্রী তার মনের সুখ-দুঃখের কথাগুলো সে তার স্বামীর সাথে মত বিনিময় করতে পারে। তখনই বলা যাবে স্বামীর Attention বা মনোযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
০৩। উৎসাহ দেয়া (Appreciation): একজন স্বামীর কাছ থেকে একজন স্ত্রী তৃতীয় যে চাওয়া তাহা হল স্বাসীর উৎসাহ (Appreciation)। স্ত্রী চায় স্বামীর তার ভাল কাজের উৎসাহ করুক এবং অনুপ্রেরনা বা প্রসংশার আশা করে। স্ত্রী চায় তার ভাল কাজগুলো মূল্যায়িত হউক। স্ত্রী যখন ভাল কাজ করে আর স্বামী সে দিকে ভ্রুক্ষেপই করে না বা অমনোযোগী থাকে তাহলে স্ত্রী ভাল কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। কারন তার স্বামী তার ভাল বিষয়ের প্রতি মনোযোগী নয়। যেমন- স্ত্রী তার জন্য ভালো ভালো রান্না করেন আর স্বামী মজা করে খান কিন্তু একটি কথাও বলেন না বা কোন প্রকার উৎসাহ মূলক কথা বলেন না।
সুতারাং প্রশান্তি আসবে কিভাবে? প্রশংসা শোনা মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। প্রত্যেকেই চায় তার ভাল কাজের প্রশংসা কেউ করুক। কিন্তু অনেক স্বামী বুঝে বা না বুঝে তার স্ত্রীর ভাল কাজের প্রতি কোন প্রকার নজর দেয় না। আমাদের সমাজে এই ভুলটা প্রায়ই স্বামীরা করে থাকে। ঠিক তেমনি ভাবে স্ত্রীকেও তার স্বামীর ভাল কাজের প্রশংসা করা বা উৎসাহ প্রদান করিলে তাদের সংসার জীবন আরোও মধুর ও সুখময় হয়ে উঠে। তাই সংসার জীবনে সুখি হতে হলে স্বামীকে তার স্ত্রীর ভাল কাজে উৎসাহ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রতিপালন করা উচিত।